বাবা বিষয়ক বাতুলতা

বাবা (জুন ২০১২)

পাঁচ হাজার
  • ২৫
  • ৭০
ভীষণ বেকায়দায় পড়ে গেছি। গল্পকবিতা এমন একটা বিষয় সেটে দিয়েছেন যা আমি সেই ছোট বেলাতেই হারিয়েছি। হ্যা আমি ছোট বেলাতেই বাবাকে হারিয়েছি। পত্রিকা আর বই পুস্তক পড়ে পড়ে বাবাকে নিয়ে লিখলে সেটা কতটা বাস্তব হবে তাই নিয়ে ভাবছি।

আজকের কয়েকটা পত্রিকার হেড লাইন-
"নেশাখোর বাবা নেশার টাকা জোগাতে তার ছমাস বয়সী পুত্র সন্তান বিক্রি করে দিয়েছেন।"
" টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় নেশাগ্রস্ত ছেলের হাতে বাবা খুন।"
"স্ত্রী এবং চার সন্তানকে তাড়িয়ে দ্বিতীয় বিয়ে করেছেন এক পিতা।"

ধ্যৎ মনটাই খারাপ হয়ে গেল। গালে হাত দিয়ে দিস্তা দিস্তা কাগজ টেবিলে ছড়িয়ে সেগুলোয় বাবা নামানোর ব্যাপারে ভাবছি, কি লিখা যায়!

কিরে ভাইগনা কি ভাবতাছস্?
কানের খুব কাছে মিজান মামার কাকের মতো গলায় প্রশ্নটা শুনে আমি তার দিকে তাকিয়ে বলি-
মামা, বাবা নিয়া গল্প লিখতে অইব, কিন্তু আমার মাথায় কিছুই আইতাছে না...
হুম...
অর্থ মন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের মতো ঠোটদুটো উপরের দিকে ধনুকের মতো বাকা করে কি যেন ভাবতে লাগলেন মামা। ইদানিং মামার মাথায়ও উনার মতো টাকের খনি গজিয়েছে।

চল ভাইগনা দেখি কিছু করন যায়নি।
আমি তৈরি হয়ে মামার পিছু নিলাম। মামা সেল ফোনে কাকে যেন ফোন দিলেন। কথার শেষে তার চকচকে চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো কোন সমাধান হয়ে গেছে। আমিও সন্তুষ্ট হলাম।

মামার সাথে বেরিয়ে পড়লাম সময় ব্যয় না করেই। রাস্তায় নামতেই দুটো লোক আমাদের সাথী হলো। দেখতে কিম্ভুতকিমাকার। ইয়া বড় বড় চুল তার উপরে মনে হয় কোন একটা তেলের পুরো শিশি ঢেলে দিয়েছেন। চুলের ডগা বেয়ে সেই তেল যেন কোন মতে মাথা ত্যাগ করার পায়তারা করছে। আচ্ছা তেল যখন দিয়েছেনই দুদিকে দুটো বেনী পাকিয়ে নিলেও তো চলতো। বেশ দেখতে হতো। ভাবতে ভাবতে কখন যে হেসে ফেলেছি বুঝতেই পারিনি।

ভাগিনা হাসেন ক্যান!
না মানে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল হঠাৎ তাই...
ওহ আমনেতো আবার লেখক মানুষ কখন কি ভাবেন... বলেই উনি হো হো করে হাসতে লাগলেন।

মহাসড়কের ঠিক মাঝখানে টাইল্সে আচ্ছাদিত একটা সুদৃশ্য দালানে এসে উপস্থিত হলাম আমরা। তেল মামা (লম্বা চুলো মাথায় অতিরিক্ত তেল দেয়া লোকটির আর নাম জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়নি বলে তার নাম দিলাম তেল মামা) তৃপ্তির হাসি হেসে বললেন-

লন ভাইগনা আইয়া পড়ছি বাবার দুয়ারে। আয়েন ভিতরে আয়েন।
আমি আশেপাশের অবস্থা দেখতে দেখতে সেই বাড়িতে ঢুকে পড়ি। চারদিকের পরিবেশের সাথে তুলনায় এটাকে জান্নাতও বলা যায়। জং ধরা দোচালা, আধা পাকা আর কূড়ে ঘরের জংগলে এমন টাইলসে আবৃত শীততাপ নিয়ন্ত্রিত বাড়িকে জান্নাত ভাবা মোটেও দোষের নয়।

মামা এইটা কার বাবার বাড়ি?
তেল মামা আমার কানের কাছে মুখ এনে বললেন-

ভাইগনা আস্তে বলেন। এইটা "ব্রেক বাবার আস্তানা, ঐ যে মাজারটা দেখতাছেন (সামনের সাদা টাইলসে ঘেরা জরির ফুলঝুড়ি ঝোলানো আর আগর বাতির তীব্র ধোয়াযুক্ত জায়গাটার দিকে তাকাই) ঐটা হইল "ব্রেক বাবা"র মাজার। উনি এই জায়গায় খারাইয়া খারাইয়া হাতের ইশারায় ইন্টারডিসটিক টেরাক পরযন্ত থামাইয়া ফালাইতেন। টেরাকের বাবার ক্ষমতাও নাই একচুল নড়নের। অনেক বড় কামেল লোক ছিলেন। উনার বড় পুত্র এখন গদানশীন বাবা "সাবেকুল আতির"। তিনায় আগেই জানতে পারেন এইহানে আইজকা কে আইতাছে...

বলেন কি মামা?
হ ঠিকই কইতাছি।
মনে মনে বলি এমন লাখ কয়েক ব্রেক বাবা যদি ড্রাইভারদের পাশে বসিয়ে দেয়া যেত তাহলেও
অন্তত মন্ত্রীদের জেরা করার সুযোগ কমত। কিছু মানুষ বেচে যেত অপঘাতে মৃত্যুর হাত থেকে। সামনে মানুষ, ব্রেক বাবা বলবেন "ব্রেক" ব্যস কোন খবর হবে না এঙ্েিডন্টের।

আমার আশ্চর্যের ঘোর না কাটতেই খাদেম শ্রেণীর একজন লোক এসে মিজান মামাকে ডেকে নিয়ে গেলেন। আমিও মামার পিছু পিছু গেলাম। খাদেম একটা কাগজের টুকরা মামার হাতে ধরিয়ে দিলেন। সেখানে লেখা আছে "আজ বাথরুম ধোয়ার দায়িত্ব মিজানুর রহমানের"। আমি টাসকি খেয়ে গেলাম। আসলেই তো, আজ যে মিজান মামা এখানে আসবেন সেটা উনি জানলেন কেমন করে? আমারও একটা ভক্তি অক্তি ভাব চলে আসছে।

খাদেমের নাম এরশাদুল লতিফ। মামা উনার কানে কানে জিজ্ঞেস করলেন-
অবস্থা কি?
দুইজন ট্রাক ড্রাইভার আইছিল। হেরা বাথরুম ইউজ করার পর থেইকা তালা মারা অইছে।
অবস্থা কি খুব খারাপ?
এই আস্তানা বানাইতে গিয়া আমার বাপজান পুলিশের পিটানি খাইয়া মরছে, আমার চউক্কে পানি আয়ে নাই। তয় আফনের আজকার কামের কতা চিন্তা কইরা আমার কানতে মনে লইতাছে। দোয়া করি ভালভালাশির ফিরা আয়েন। দয়াল আফনেরে রক্ষা করুক। ব্রেক বাবা আপনার নাকে ব্রেক লাগায়া দেউক। আমিন।

বাথরুমের তালার চাবি মামার হাতে ধরিয়ে দিয়ে এরশাদ সাহেব তার গায়ে বিশেষ কায়দায় ফু টু দিয়ে বিদায় নিলেন। মামা তালা খুলে বাথরুমে ঢুকছেন, এমতাবস্থায় এরশাদ সাহেবের বাপজান বিষয়ক কথা মনে আসায় আমি আর ঝুকি নিলাম না, কি জানি কি হয়। ফিরে এলাম আতির সাহেবের আস্তানায়।

লোকজন আসছে যাচ্ছে, ইনকাম মন্দ না। কারো কাছে চাইতে হয় না এমনিতেই আমদানী ভাল। এই লোকজনের আসা যাওয়া আর ইনকাম দেখা ছাড়া এখানে জানার আর কিছু নেই। ওহ ভুল বলেছি, জানার আছে মিজান মামার অবস্থা কি?

ঐতো মামা আসছেন, মামার চেহারায় নূরানী তৃপ্তির ঝলক দেখলাম। মনে হলো বাবার সেবায় (আসলে বাবার বাথরুমের সেবায়) ধন্য হয়েছেন।
ভাইগনা মনটা ভইরা গেছেরে। বাবার খেদমত করার সুযোগ কয়জনে পায় ক।
মামা তুমি গোছল দিছ তো!
আরে বেডা এইডা কি শীতকাল নাকিরে! তর আর নাক সিটকান লাগতনা, পুরা গোছলই দিছি। চল তরে লইয়া বাবার কাছে যাই।
মামার ইয়ার দোস্তরাও ততক্ষনে আমার সঙ্গী হয়েছেন। সবাই মিলে এরশাদ সাহেবের সাথে অন্দর মহলে বাবার কাছে রওনা হলাম। খাদেম আমাদের দরজায় দাড় করিয়ে রেখে ভিতরে গেলেন। দরজার ফাক গলে ভিতরে সাবেকুল আতির সাহেবকে দেখছি আমি। চেহারা আর দশজন আয়েশী ধনী মানুষের মতোই, সাস্থ্যবান সুপুরুষ। একপাশে পুরুষরা বসে আছেন অন্য পাশে মহিলারা। আতির সাহেব মাঝে মাঝে দ্বিতীয় সাড়ির একজনের দিকে তাকাচ্ছেন, যেমন করে কোন কিশোর প্রেমিক তার প্রেমিকার দিকে তাকায়।

খাদেম আমাদের ভিতরে যেতে বললেন। আমরা যেই ভিতরে যাওয়ার জন্য পা বাড়ালাম অমনি আতির সাহেব হাতের ইশারায় থামতে বললেন। খাদেম আমাদের ধরে মূর্তির মতো দাড় করিয়ে তার কাছে গেলেন। ফিরে এসে আমাকে বাইরে নিয়ে এলেন-

বাবায় সব জানে বুজলেন বাবাজী। হে আপনেরে দেইখাই বুঝছে আপনার কি দরকার। লন আমার লগে।

আমরা খাদেমের পিছনে হাটতে লাগলাম। মাজারের পিছনে অনেকটা দূরে একটা আধাপাকা বাড়ির দরজায় গিয়ে গোয়েন্দা কায়দায় তিনটা টোকা দিয়ে অনেকক্ষন পর আরেকটা টোকা দিলেন, টক টক টক................টক। ভিতর থেকে েদরজা খুলে গেল। আমরা সবাই ভিতরে গেলাম।

আজগর উনি বাবা সম্পর্কে জানতে আইছেন উনারে খাতিরদারি করিছ...
বলে খাদেম আমাদের রেখে চলে এলেন। আজগর নামের চিকন করে একজন লোক আমাদের ভিতরে নিয়ে গেলেন। এখানে এসে বসার পর আজগর বাবার অর্ডার দিলেন-
তিনডা গোলাপজল আর একটা চিতা নিয়া আয়রে মজিদ...
বিদ্যুতের গতিতে ১৪/১৫বছর বয়সের একটা ছেলে হাত মুঠো করে আজগরকে কি যেন দিয়ে গেল। কিছু ভাববার আগেই মিজান মামা আর তেল মামা দুইজনের হাতে গোলাপি রংয়ের একটা করে ট্যাবলেট আর আমার হাতে লাল রংয়ের একটা ট্যাবলেট দিলেন। আমার হাতে দেয়া ট্যাবলেটটা নিয়ে দেখলাম সেটার গায়ে ডবি্লউ ওয়াই লেখা। কি সুন্দর বিস্কিটের ঘ্রাণ আসছে সেটা থেকে।

বুঝছেন ভাই আপনে অইলেন নতুন মানুষ তাই আপনেরে কড়া বাবা দেয়া যাইব না। এই বাবা খাইলে কোন চিন্তা থাকে না কাম করবেন রাইত দিন ঘুম আইব না। একেবারে মোক্ষম অসুদ। আজগর বলতে থাকে।
আমি সাত পাঁচ না ভেবেই ওটা মুখে পুরে গিলে ফেলি।

হো হো করে হেসে ওঠেন তেল মামারা।
আরে ভাইগনা এইটা এমনে খায় না। বাবারে ইজ্জত দিতে অয় না দিলে বাবায়ও কিছু দিব না।
বলতে বলতে তারা পকেট থেকে এলমুনিয়াম ফয়েল বের করলেন। ট্যাবলেট টা সেটার উপর রেখে নিচে একটা মোম জ্বালিয়ে দিলেন। ওটা থেকে যখন ধোয়া উঠতে থাকলো সেই ধোয়া নাকে টেনে নিতে থাকলেন।

এই হইল বাবা, বুঝলেন ভাইগনা!

আমার মনে পড়ে নানা যখন তার ছেলেকে কাজে সহায়তার জন্য ডাকতেন মিজান মামা কোন দিনই তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতেন না। আজ এখানে আতির বাবার বাথরুম ধুয়েও মামা খুশি আর সামান্য ট্যাবলেটকেও কি সুন্দর বাবা বলে মুখে খই ফোটাচ্ছেন.............

আমি বাইরে চলে আসি।

নাহ্ বাবা নিয়ে কিছুই লেখা হলো না। আমাকে ফিরে যেতে হবে নানার কাছেই। যার ছেলে বার বার ফেল করার পরও তাকে শিক্ষিত ভদ্র একটি জীবন দেয়ার অদম্য বাসনা বুকে নিয়ে যিনি মাঠে যান লাঙ্গল নিয়ে, তার কাছে।

[ইহা অতিশয় কাল্পনীক রম্য লেখার চেষ্টা মাত্র, সত্য খোজার কোন অবকাশ নাই। বাবা/ইয়াবা বিষয়ক তথ্যাদি উইকিপিডিয়া হইতে ধার করা]
আপনার ভালো লাগা ও মন্দ লাগা জানিয়ে লেখককে অনুপ্রানিত করুন
পারভেজ রূপক বাবার গল্প পড়ে মজা পেলাম...
মামুন ম. আজিজ একটু আগে একটা গল্প পড়লাম ..টিটু নামের এক লেখেকর ইয়াবাব....এখথানেও সেই ইয়াবাবা.....আপনার মামা কাহিনী আরও বাস্তবতা তুলৈ ধরবে সেই প্রত্যাশায় রইলাম
খোরশেদুল আলম মামা ভাইগনা এবার বাবার আস্তানায়। চাইনিজ গোসল নয় একেবারে পুরা গোসল। পাঁচ হাজার ভাই, খুব ভালো ভালো রম্য লিখতে পারেন আপনি।
খন্দকার আনিসুর রহমান জ্যোতি আমার মনে পড়ে নানা যখন তার ছেলেকে কাজে সহায়তার জন্য ডাকতেন মিজান মামা কোন দিনই তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসতেন না। আজ এখানে আতির বাবার বাথরুম ধুয়েও মামা খুশি আর সামান্য ট্যাবলেটকেও কি সুন্দর বাবা বলে মুখে খই ফোটাচ্ছেন............. // khub valo laglo babar kichhu dosh truti bichchuti..kichhuta hasso rosh sob miliye sundor lekha........5000 apnake dhonnobad............
রওশন জাহান মামা নিয়ে লেখা এভাবেই এগিয়ে যাক পাঠককে আনন্দ দিয়ে। শুভ কামনা রইল।
তানি হক দারুন লিখেছেন ভাইয়া ...একদমই ভিন্ন , একটি থিম .. ..অনেক ভালো লাগলো ....আপনাকে সুভেচ্ছা ও ধন্যবাদ
সিয়াম সোহানূর চমতকার রম্য গল্প। শুরু করলে পাঠককে টেনে নিয়ে যাবে সমাপ্তি রেখায়।আর পড়তে পড়তে বিনোদনতো আছেই। ধন্যবাদ ভাই পাঁচ হাজার।
Lutful Bari Panna মনে হচ্ছ লেখক এই জগতের অনেকাংশ নিজ চোখেই দেখেছনে। কীবোর্ডের কিছু ঝামেলার জন্য বিস্তারিত কমেন্ট করতে পারছনা এক কথয় বলি রম্যের আড়ালে চমৎকার একটা সমসাময়িক সমাজ চত্র।

০৭ জুন - ২০১১ গল্প/কবিতা: ১৩ টি

বিজ্ঞপ্তি

এই লেখাটি গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষের আংশিক অথবা কোন সম্পাদনা ছাড়াই প্রকাশিত এবং গল্পকবিতা কর্তৃপক্ষ এই লেখার বিষয়বস্তু, মন্তব্য অথবা পরিণতির ব্যাপারে দায়ী থাকবে না। লেখকই সব দায়ভার বহন করতে বাধ্য থাকবে।

প্রতি মাসেই পুরস্কার

বিচারক ও পাঠকদের ভোটে সেরা ৩টি গল্প ও ৩টি কবিতা পুরস্কার পাবে।

লেখা প্রতিযোগিতায় আপনিও লিখুন

  • প্রথম পুরস্কার ১৫০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • দ্বিতীয় পুরস্কার ১০০০ টাকার প্রাইজ বন্ড এবং সনদপত্র।
  • তৃতীয় পুরস্কার সনদপত্র।

আগামী সংখ্যার বিষয়

গল্পের বিষয় "ছোটবেলা”
কবিতার বিষয় "ছোটবেলা”
লেখা জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ২৫ ডিসেম্বর,২০২৪